প্রকাশিত: Sat, Dec 31, 2022 3:46 PM
আপডেট: Mon, May 12, 2025 7:27 AM

মেট্রোরেলের চালক আফিজাকে নিয়ে নোংরা সমালোচনার শেষ কোথায়?

নাদিম মাহমুদ

একটা বিষয় আমাকে যথেষ্ট মানসিক পীড়া দিচ্ছে। আমি সত্যি হতবাক হয়ে পড়েছি, এই দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠি ঠিক এতোটা ভয়ানক ‘দুর্গন্ধময় ভাবনা’ ভাবতে পারে। ‘কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ স্নাতক করে কেন এক নারী ঢাকার মেট্রোরেলের চালক হতে পারে, সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, খোদ আমাদের কিছু শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ। এদের অধিকাংশই মনে করছে, ট্রেনের চালক হতে গেলে তো কেমিক্যাল প্রকৌশলী হওয়ার প্রয়োজন নেই, এটি ওভারকোয়ালিফাইড। অনেকে আবার মনে করছে, সরকার যোগ্যদের চাকরি দিতে পারে নাই বিধায়, কেমিক্যাল প্রকৌশলীদের ‘ট্রেনচালক’ হতে হচ্ছে। 

অনেকে আবার মনে করছেন, মেট্রোট্রেনের চালক হতে গেলে তো, আহামরি পড়াশোনার প্রয়োজন নেই। ঠিক কোন যুক্তিতে আমাদের এই সুশীল-বুদ্ধিজীবী সমাজ, একজন রসায়ন প্রকৌশলীকে রেলচালক দেখতে চান না এটি আমার বোধগম্য নয়। তবে এইটুকু বুঝি, এই মানুষগুলো সত্যি ভাবেন না, এই দেশের ঠিক বিশেষায়িত পড়াশোনার প্রয়োগিক কতোটুকু হয়। এখন ডাক্তারে পাস করে, বিসিএসে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে চাকরি করেন, প্রকৌশলী পাস করে ব্যাংকের হিসেব রক্ষক হন, ফার্মেসী পাস করে ব্যাংকের ম্যানেজার হন, অণুজীব পড়ে সাংবাদিক হন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাস করে বিজ্ঞান মন্ত্রণালয় সামলান। এই রকম হাজার হাজার উদাহরণ প্রমাণ সাপেক্ষে আমি দিতে পারি।  আমি জানি না, মেট্রোরেলের ওই চালক নারী না হয়ে, ছেলে হলে আমাদের এই সমালোচকরা কী বলতেন। তবে এইটুকু বলে রাখি, আজকে আমাদের দেশের রাস্তায় যে ‘মরণফাঁদ’ তৈরি হয়েছে, তা কেবল আমাদের এই সমালোচকগোষ্ঠিদের মতো কিছু মানুষ অক্ষরজ্ঞানহীন বাস-ট্রাক ড্রাইভারদের লাইসেন্স দেন বলে। এরা ভাবে না, 

আজকে যদি একটি বাস চালক ‘রসায়ন প্রকৌশলী’ তে পড়াশোনার সুযোগ পেতো, তাহলে সড়কের দুর্ঘটনা কতটা কমে যেতো। এই মানুষগুলো মনে করে না, আমাদের বাস-ট্রেন-লঞ্চ চালকদের পড়াশোনা থাকা উচিত। আমাদের এই ভাবনায় চির ধরাতে পারি নাই বিধায়, বছরে হাজার হাজার প্রাণ রাস্তায় ঝড়ে, পানিতে ডুবে মরে। এই সমালোচকদের অনেকেই হয়তো বিদেশে থাকে, তারা যে বাস-ট্রেনে চড়ে সেই চালকরা স্যুট-টাই পরে যানবাহন চালান। কারণ সেখানে চাকরির কোনো ভেদাভেদ বা অসম্মান নেই। আর থাকবেই বা কেন, একজন স্নাতকোত্তরধারী অফিস করে যে বেতন পান, একজন বাস-ট্রেন চালক তাঁর চেয়ে বেশি বেতন পান। আর সেটি আছে বিধায়, আজও বিদেশে অনেক বাচ্চাকে তাদের জীবনের লক্ষ্য কী তা জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দেয়, তাঁরা ট্রেন চালক হতে চান, বাস চালাতে চান। কারণ এদের শিক্ষা ব্যবস্থায়, এদের এইসব পেশাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে, সম্মান দিতে শিখিয়েছে। আমরা সেটি করতে পারি নাই, বিধায় আজকে একজন কেমিক্যাল প্রকৌশলী কেন ‘ট্রেনের চালক’ হবে সেই আলোচনায় পড়ে আছি। 

আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটেনি বিধায়, আমরা নারীদের এগিয়ে চলাকে, সহ্য করতে পারি না। আমরা হয়তো ভুলে গেছি, বিশ্বে যান দুর্ঘটনায় পুরুষদের চেয়ে নারীদের হার অনেক কম। যে কারণে, দেশের বাহিরে নারীদের হাতে স্টিয়ারিং দিয়ে পুরুষরা পাসের আসনে বসে থাকে। যেকোনো পেশাকে সম্মান দিতে পারা আমাদের মৌলিক শিক্ষা হওয়া উচিত। কে প্রকৌশলী কে ডাক্তার সেটি মুখ্য নয়, কার কোন পেশায় ভালো লাগা, ভালোবাসা তৈরি হয়েছে, সেটিকে সুযোগ করে দেয়া আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই প্লিজ, এইসব ‘অসাড়’ আলোচনা করা থেকে বিরত থাকুন। ফেসবুক থেকে